শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন
আলম রায়হান
জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় নির্মমভাবে প্রাণ যায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর। ২৯ জুলাই এ ঘটনায় আহত হয় আরও ১৪ জন। তারা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। এর প্রতিবাদে কারও জন্য অপেক্ষা না করে শিক্ষার্থীরাই রাস্তায় নেমে পড়ে। এক সপ্তাহের বেশি টানা আন্দোলনে অনেক দাবি বাস্তবায়িত হয়। আশা-নিরাশার দোলাচলে শেষতক আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরেছে। এদিকে দেশবাসীর ব্যাপক সমর্থন পাওয়া এই আন্দোলনের জোয়ারকে কেন্দ্র করে কী ভয়ানক এক পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমানের ফেসবুকে ৭ জুলাই ভোরে শেয়ার করা একটি পোস্ট থেকে। আঁতকে ওঠার মতো ভিডিও। যাতে দেখা গেছে, ব্যাগের ভিতর দা, পাইপগানসহ এক শিবির কর্মী ছিল আন্দোলনকারীদের মিছিলে; ঘটনাচক্রে সে ধরা পড়েছে জনতার হাতে। স্মার্ট এই শিবির কর্মী প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র, এসেছিল মানিকগঞ্জ থেকে।
স্মরণ করা যেতে পারে, স্বাধীনতাবিরোধীরা বড় রকমের অঘটন ঘটানোর জন্য বরাবর আগস্ট মাসকেই বেছে নেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এর বড় প্রমাণ। আরেকটি বড় অপকর্ম ঘটানোর জন্য হয়তো ২০১৮ সালের আগস্টকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এজন্য হয়তো ছাত্রবেশে অনেক শিবির কর্মী আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু এরা বড় রকমের সর্বনাশ করার আগেই নরমে-গরমে ‘দেশের বিবেক জাগানিয়া’ কোমলমতিদের ঘরে ফেরানো গেছে। এ এক স্বস্তির খবর। এর পরও রয়ে গেছে অস্বস্তির কিছু প্রশ্ন। মানতেই হবে, সড়ক পরিবহন খাতে প্রায় ৪৭ বছরের ক্রমবর্ধমান অরাজক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সাহসী কিশোরবাহিনীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে বেশ ফলোদয় হয়েছে। টনক নড়েছে সংশ্লিষ্ট সবার। প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো অনেক কদর্য রূপও বেরিয়ে এসেছে। দেখা গেছে, যারা রাষ্ট্র চালান, আইন প্রয়োগ করেন তাদের অনেকেই ন্যূনতম আইন মানেন না। এমন অনেক ঘটনাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ফলে প্রকাশ পেয়েছে। এদিকে বড় রকমের বিপদে পড়তে পড়তে কোনো রকম সামলে নিয়েছে সরকার। সামলাতে না পারলে জাতীয় নির্বাচনের মাত্র চার মাস আগে উল্লিখিত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটনাপ্রবাহ দেশের জন্য বড় রকমের বিপত্তির কারণ হতে পারত। শেষতক এ বিপত্তি ঘটেনি। এ আন্দোলনের ফলে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। আরও শক্ত আইন করার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ ৬ আগস্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত বা কারও মৃত্যু হলে চালককে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। তবে তদন্তে যদি দেখা যায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে; অর্থাৎ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। এসব বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর খসড়ায় অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। ঘটনাপ্রবাহের পর্দা যেখানে নেমেছে তাতে এ যাত্রা দেশবাসী হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। এটি বড় রকমের স্বস্তির খবর। এর পরও অনেক অস্বস্তির প্রশ্ন জনমনে দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, পরিবহন মাফিয়ারা কি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে? দুই. বিএনপি আর কতকাল অন্যের ডিমে তা দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করবে? প্রথম প্রশ্নটির ভিত্তি তৈরি হয়েছে অনেক বছর ধরে, কয়েক দশকে। জট পাকাচ্ছে অনেক বছরের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে। সময়ের প্রবাহে এই জট আরও জটিল হয়েছে এবং পরিবহন খাত পুরোপুরি চলে গেছে মাফিয়াদের হাতের মুঠোয়। কৌশলগত কারণে সামনে রাখা হয়েছে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে রাজনৈতিক শক্তিসহ নানান শক্তিকেন্দ্রকে। সড়ক পরিবহন খাতের মাফিয়াদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন শক্তি কেন্দ্রকে ম্যানেজ করার কৌশলের এক পর্যায়ে সামনে আনা হয় মন্ত্রীদের। জেনারেল এরশাদের সময় সামনে আনা হয়েছিল মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। তিনি সাজলেন বাসমালিক নেতা; ময়ূরপুচ্ছ পরার মতো। খালেদা সরকারের সময় মির্জা আব্বাসকে এবং শেখ হাসিনা সরকারের সময় শাজাহান খানকে সামনে আনা হয় পরিবহন খাতের মাফিয়া স্বার্থ রক্ষার জন্য। জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মশিউর রহমান রাঙ্গা এখনো ক্ষমতার কেন্দ্রে বহাল। পরিবহন খাতের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে এখন শাজাহান-রাঙ্গা প্রধানত সামনে আছেন। সঙ্গে আছেন আরও অনেকে। এই অনেকের মধ্যে কেউ কেউ আবার বেশ পরিচিত। কিন্তু চিরকালই অপরিচিত থেকে যাচ্ছে পরিবহন খাতের নেপথ্য মাফিয়ারা। এরা যেমন নাচায় তেমন নাচে পরিবহন খাত! ফলে গণপরিবহন ব্যবহারকারী জনগণ হয়ে আছে জিম্মি ও সরকার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায়। এদিকে প্রকৃত মালিক ও শ্রমিকরা হচ্ছে নন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। কারও কারও মতে, নেপথ্যে থাকার ক্ষেত্রে পরিবহন খাতের নেপথ্য নাটের গুরুদের সঙ্গে মাদক গডফাদারদের সাফল্যের বেশ মিল আছে। লক্ষণীয় বিষয়, এত কিছু হলো, ক্রসফায়ারের পর ক্রস ফায়ার। কিন্তু বহুল আলোচিত গডফাদার যায় ওমরায়, সেখানে বসে ফেসবুকে পোস্টও দেয়। মাদক মাফিয়ারা রয়ে যায় অন্তরালেই, সব ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেমন আছে সড়ক পরিবহন মাফিয়ারা। এরা এতই ক্ষমতাধর যে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যখন পুরো দেশ অচল, সরকার বিব্রত; তখন সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। শুধু তাই নয়। কোমলমতিদের রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফেরার জন্য এন্তার আহ্বান-অনুরোধের পাশাপাশি ধমকও চলল সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে। এমনকি গুণধর শিক্ষামন্ত্রী আজগুবি বয়ান ছাড়লেন, শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে না ফিরলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না কার্যকর কোনো মহল থেকেই; ধমকের বিষয়টি তো অনেক পরের। সড়ক পরিবহন খাত এতই শক্তিধর যেন অসুর; মা দুর্গা ছাড়া আর কেউ বধ করতে পারবে না। এদের হাতেই জনগণ জিম্মি! এদিকে জনগণকে জিম্মি করে রাখা সড়ক পরিবহন খাতের বাস্তবতা কী? প্রথমেই ধরা যাক সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের কথা। এদের নেতা আবার শাজাহান খান, খুবই ক্ষমতাধর তিনি। জাসদ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সময় বেশ আলোচিত ছিলেন ফরিদপুর-মাদারীপুরে। যে বিষয়ে তিনি আজও বেশ আলোচিত-সমালোচিত। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের এক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেই দশক পার করার দোরগোড়ায়। এই মন্ত্রীর ভিত্তি বেশ শক্ত। পরিবহন শ্রমিক নেতা হিসেবেও তিনি রয়েছেন শীর্ষে। কিন্তু এই নেতার দ্বারা পরিবহন শ্রমিকদের কতটুকু উপকার হয়েছে? শ্রমিকদের জীবনমানের কি কোনো উন্নতি হয়েছে? হয়নি।
গড়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয় পরিবহন শ্রমিকদের। তবু পারিশ্রমিক নামমাত্র। ফলে এক দিন কাজ না করলে বেশির ভাগ পরিবহন শ্রমিককে পড়তে হয় অনাহারে থাকার অবস্থায়। এদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে খুশি রাখার জন্য মাঝেমধ্যে নানান কথা বলা হয়। এর মধ্যে তাদের বহুল আলোচিত নেতা এক মহা উদ্ভট কথাও বলেছেন, ‘ড্রাইভাররা গরু-ছাগলের ছবি চিনলেই হবে!’ ব্যস, এসবেই খুশি সহজ-সরল পরিবহন শ্রমিকরা। আসলে নানান কথা বলে পরিবহন শ্রমিকদের ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে। যেমন একসময় বড় বড় আওয়াজ দিয়ে আদমজী জুট মিলের শ্রমিকদের ভুলিয়ে রাখা হতো। শুধু ভুলিয়ে রাখা নয়, পরিবহন শ্রমিকদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোরও কুশলী চেষ্টা করা হয় সুকৌশলে। আর এ চেষ্টার সাফল্য প্রায় শতভাগ। ফলে যাত্রী-শ্রমিক বিরোধ প্রতিদিনেরই খবর, প্রায় প্রতি মুহূর্তের ঘটনা। শুধু তাই নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে সমাবেশে হামলার ঘটনাও আছে পরিবহন শ্রমিকদের নামে; এ থেকে রেহাই পায়নি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরও। ইচ্ছা করেই জনগণ ও শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধের পরিবেশ চাঙা রাখা হচ্ছে। যে বিরোধ থেকে দুই পক্ষের কারও কোনো লাভ হচ্ছে না। তবে অদৃশ্যমান লাভের বাইরেও দৃশ্যমান বেশ লাভ হচ্ছে শাজাহান খানের। তিনি ডাক দিলেই অনেককে পান। রাস্তায় জড়ো করতে পারেন অসংখ্য পরিবহন শ্রমিককে। তা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হোক অথবা হোক খালেদা জিয়ার অফিসের কাছে, গুলশানে। এই ক্ষমতার জন্য রাজনীতি এবং সরকারেও নিশ্চয়ই শাজাহান খানের বেশ গুরুত্ব বাড়ে। আর রাজনীতিতে গুরুত্বই হচ্ছে প্রাপ্তিযোগের গুরুত্বপূর্ণ সোপান!
সড়ক পরিবহন খাতের নেতা হিসেবে আরেক আলোচিত নাম হচ্ছে মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি আছেন এরশাদ সরকারের আমল থেকে। মাঝখানে খালেদা সরকারের সময় পরিবহন মালিক নেতা হিসেবে বেশ আলোচনায় ছিলেন মির্জা আব্বাস। আরও অনেক পরিবহন মালিক-নেতা আছেন। কিন্তু এদের দ্বারা প্রকৃত মালিকরা কতটা লাভবান হচ্ছেন তা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বরং প্রচলিত কথা আছে, প্রকৃত মালিকরাও জিম্মি। কিন্তু টুঁশব্দ করার উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে জনগণ একটু বেহেতর অবস্থায় আছে। কোনো প্রতিকার হোক বা না হোক, প্রতিকারের আওয়াজ তো তুলতে পারছে জনগণ। এটিই বা কম পাওনা কীসে!
দ্বিতীয় প্রশ্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। অন্যের ডিমে ‘তা’ দেবে বিএনপি আর কতকাল? ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে তা দেওয়ার একটি বিষয় আছে, তা পাখিকেই করতে হয়। অবশ্য পাখিকুলের এ কাজ করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে মানুষ, নিজের স্বার্থে। তবে প্রাকৃতিক নিয়মের বাচ্চা এবং মেশিনে ফোটানো বাচ্চা সমান শক্তিশালী হয় না। তবে বাচ্চা ঠিকই ফোটে। এদিকে কোকিলের ডিমে কাকের তা দেওয়ার একটি বাস্তবতা আছে প্রকৃতিতে। এ ক্ষেত্রেও বাচ্চা ফোটে। হয়তো প্রকৃতির এই রেওয়াজ অনুসরণ করেই একসময়ের শাসক দল বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে বেকায়দায় পড়ে অন্যের ডিমে তা দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এজন্য কিউবেটর হিসেবে ব্যবহার করছে জামায়াতে ইসলামীকে। এতে ডিম কিছুটা গরম হলেও বাচ্চা ফোটেনি কখনো। অথচ গত ১০ বছরে বিএনপি বহুবার অন্যের ডিমে তা দিয়েছে এবং প্রতিবার ‘কিউবেটর’ হচ্ছে জামায়াত-শিবির।
সর্বশেষ সড়ক পরিবহনে অরাজক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কিশোর-কিশোরীদের সর্বজনীন আন্দোলনের ডিমে তা দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু এবারও বিফল। অন্যের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানো তো দূরের কথা উল্টো বেশ ঝামেলায় পড়েছে সাবেক শাসক দলটি। আন্দোলন প্রশ্নে দলটির আন্তরিকতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যার খেসারত স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে অনিবার্য। আর হাতেনাতে ফল পাওয়ার ঘটনা হচ্ছে মামলা। এমনিতেই মামলার ভারে ন্যুব্জ দলটি ত্রাহি মধুসূদন অবস্থায় আছে, এর ওপর নতুন মামলা বোঝার ওপর কেবল শাকের আঁটি নয়, পাথরচাপার অবস্থা হয়েছে। নানান মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি এ কাজ কেন করতে গেল? এ ব্যাপারে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতো ধীরস্থির ও প্রজ্ঞাবান নেতা অপরিণামদর্শী আচরণ কেন করলেন? মাহমুদুর রহমান মান্নার ঘটনার পরও কি হুঁশ হয়নি সাবেক এই মন্ত্রীর। তাহলে দলটির সব নেতাই কি রুহুল কবির রিজভীর মতো হালকা অবস্থায় নেমে এসেছেন! সে যাই হোক, অন্যের ডিমে তা দেওয়ার চেষ্টার কুফল পাওয়া গেছে হাতে হাতে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা হয়েছে। অভিযোগ গুরুতর— রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র!
নানান টানাপোড়েন ও আশঙ্কার পরও স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফিরেছে। কিন্তু তাই বলে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে, তা ভাবা ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রে যা যা করা হয়েছে তার সুফলের প্রভাব খুব বেশি স্থায়ী হবে, তা ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। আর সরকারেরও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন, কিশোরবাহিনীর নেতৃত্বে যে আন্দোলন সারা দেশে কাঁপন ধরিয়েছে তা আসলে প্রস্তুত হয়েই ছিল। সুকান্তের কবিতার মতো অপেক্ষায় ছিল কেবল একটি ম্যাচের কাঠির। কেবল এই অবস্থা সামাল দিতে কত কী যে করতে হয়েছে তা তো সরকারের চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। আর বিষয়টি যেখানে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে সেখানে সবকিছু মিটমাট হয়ে গেছে তাও কিন্তু নয়। কিশোরবাহিনী ঘরে ফেরার পর যুবকবাহিনী কিন্তু রাজপথে নামার চেষ্টা করেছে। এদের মোকাবিলা করা গেলেও, বিষয়টি স্থায়ী কিছু নয়। বরং আপাতসাফল্য হিসেবেই ধরে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় এটি খুবই পরিষ্কার, পরিবহন মাফিয়াদের সঙ্গে সরকারের আপস করার আর কোনো সুযোগ কিন্তু থাকল না। এটি সরকারের নীতিনির্ধারকদের যত তাড়াতাড়ি বোধগম্য হবে, ততই মঙ্গল; শুভ দেশের জন্য। এ কথা ঠিক, মাফিয়ারা অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে; অনেক সময় ভোটও নিয়ন্ত্রিত হয় দেশি-বিদেশি মাফিয়াদের মাধ্যমে। কিন্তু মাফিয়ারা আর যাই পারুক, একটা পর্যায়ের পর জনরোষ কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ইতিহাসের পাতায় পাতায় এর উদাহরণ রয়েছে। আর যে জনরোষ কিশোরবাহিনীর মাধ্যমে ধূমকেতুর মতো প্রকাশ পেয়েছিল তা ঘরে ফিরে যাওয়া মানে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নয়! তুষের আগুন একসময় নিভলেও ক্ষোভের আগুন সহজে নেভে না।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
Leave a Reply